প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে পৃথিবী , মানুষ। মানুষের রুচি আর অভ্যাস। গ্রাহাম বেল যদি এযুগে আসতেন তাহলে নিশ্চই আই ফোন নিয়ে বিশাল বিপাকে পরে যেতেন। গাড়ি তৈরির ১০০ বছর পরেও মানুষ গাড়ির উন্নয়ন করে যাচ্ছে অবিরত। মাত্র ১০ বছর আগে চলা গাড়িও এখন ওল্ড মডেল । আগে মানুষ হ্যান্ডব্রেকের ব্যবহার জানত না, জানত না ইঞ্জিনের সঠিক ব্যবহার। কিন্তু বর্তমানে চাকা থেকে শুরু করে গাড়ির প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্টসের পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে সিলিন্ডার, ইঞ্জিনের জ্বলন প্রক্রিয়া ইত্যাদি চোখে পড়ার মতন যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে । আর হয়েছে ইঞ্জিনের ব্যাপক পরিবর্তন। বর্তমানের ইঞ্জিন অনেক বেশী কার্যকর আর উন্নত । আজকে আমরা জানব কীভাবে আধুনিক ইঞ্জিন পুরানো ইঞ্জিন থেকে আলাদা –
আধুনিক ইঞ্জিন কর্মক্ষম
বেসিক গ্যাসোলিন চালিত গাড়িগুলো খুব একটা কর্মক্ষম হয়না। গ্যাসোলিনের ভেতরের শুধুমাত্র ১৫ শতাংশ রাসায়নিক শক্তি রুপান্তরিত হয় যা সত্যিকার অর্থে গাড়ি চলতে সাহায্য করে। ইউনাইটেড ষ্টেট এনভেরনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির মতে, শুধুমাত্র ১৭ শতাংশ শক্তির ক্ষয় যখন গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়। প্রায় ৬২ শতাংশ শক্তি তাপ ও ঘর্ষণের কারনে হারিয়ে যায়।
আধুনিক ইঞ্জিনে অনেক বেশী প্রযুক্তি থাকে যার জন্য ইঞ্জিন অনেক বেশী কর্মক্ষম হয়। যেমন- ডিরেক্ট ইঞ্জেকশন টেকনোলোজি। এর মাধ্যমে জ্বালানি সিলিন্ডারে প্রবেশের আগে জ্বালানি ভালোভাবে বাতাসের সাথে মিশে যায় ফলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। আরেকটি আধুনিক প্রযুক্তি হলো টার্বো চার্জার। টার্বোচার্জারের মাধ্যমে গাড়ির এক্সহস্ট সিস্টেম থেকে সংকুচিত বাতাসকে জ্বলন চক্রে ব্যবহার করে। এই সংকুচিত বাতাস অনেক বেশী কর্মক্ষম । ভেরিয়েবল ভাল্ভ টাইমিং আর সিলিন্ডার ডিঅ্যাকটিভেশন এই দুটি প্রযুক্তি ইঞ্জিনকে শুধু ততটুকু জ্বালানি সরবরাহ করে যতটুকু ইঞ্জিনের দরকার। আর এভাবেই বৃদ্ধি পায় ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা। আধুনিক ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা নিয়ে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেটা হচ্ছে বেশী কর্মক্ষম ইঞ্জিন আন্ডার পাওয়ার্ড ইঞ্জিন হয়। আন্ডার পাওয়ার্ড বলতে নিজস্ব কোন শক্তি না থাকাকে বোঝায়। কিন্তু ধারণাটি সঠিক না।
আধুনিক ইঞ্জিন অনেক বেশী শক্তিশালী
গাড়ি আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষ জ্বালানি অর্থনীতি নিয়ে অনেক বেশী চিন্তিত। কীভাবে জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনা যায় সেই প্রচেষ্টা চলছে সবসময়। এর সাথে সাথে ইঞ্জিন শক্তিশালী করার চেষ্টা তো চলছেই প্রতিনিয়ত। আধুনিক গাড়িগুলো অনেক বেশী ভারী হয় কারণ আধুনিক গাড়িগুলোতে অনেক বেশী সেফটির পার্টস অ্যাকসেসরিজ থাকে। আধুনিক গাড়িগুলোর উপর চাপ অনেক বেশী থাকে, যেমন ভারী পার্টস বহনের সাথে সাথে এগুলোর গতিও অনেক বেশী রাখতে হয়। খুব বেশীদিন হয়নি আধুনিক গাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে। ১৯৮৩ সালে সেভরোলেট মালিবু গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ৩.৮ লিটার, ভি-৬ আর ১১০ হর্সপাওয়ার ছিল । ২০০৫ সালে ছিল মালিবু ২.২ লিটার, ১৬৯ হর্সপাওয়ার । এমনকি ভি-৬ ২০১১ মালিবু ভি-৬ থেকেও ছোট ছিল। দিনে দিনে ইঞ্জিনের শক্তি একটু একটু করে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
আধুনিক ইঞ্জিন আকারে ছোট
আগের দিনের ইঞ্জিন ছিল আকারে বড় কিন্তু আধুনিক ইঞ্জিন আকারে ছোট । আপনি এখন ভাবতেই পারেন আকারে ছোট ইঞ্জিন হয়তো খুব একটা কাজের হবে না। কিন্তু ইঞ্জিনের আকার যতই কমুক ইঞ্জিনের দক্ষতা বেড়ে আসছে সবসময় । দিনে দিনে ছোট হয়ে যাওয়া ইঞ্জিন খুবই অপটিমাইজড। গাড়ি চালাতে আসলে বড় ইঞ্জিন না, স্মার্ট ইঞ্জিনের প্রয়োজন পড়ে আর এটাই হচ্ছে আধুনিক যুগের আধুনিক সমাধান।
আধুনিক ইঞ্জিন কার্যকরী
আগের দিনের মত ইঞ্জিন চালাতে অনেক বেশী কষ্ট করতে হয়না। আগের ভি-৮ ইঞ্জিনের আটটি সিলিন্ডার সমান কাজ করতো এমনকি যখন গাড়ি শীতল অবস্থায় থাকতো। বর্তমানে সিলিন্ডার ডি অ্যাকটিভেশন বলে একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়েছে যার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজন মত আপনি সিলিন্ডার বন্ধ করে নিতে পারবেন। যখন গাড়িতে বেশী সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয় তখন অচল অবস্থায় থাকা সিলিন্ডার অটোম্যাটিক সক্রিয় হয়ে যায়। সিলিন্ডার ডি অ্যাকটিভেশন গাড়ির ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা আরো বৃদ্ধি করে। এই পদ্ধতিতে ইঞ্জিন শুধুমাত্র ততটুকুই জ্বালানি ব্যবহার করে যতটুকু এর প্রয়োজন।
আধুনিক ইঞ্জিনের পার্টনার
প্রযুক্তির সবথেকে বেশী গ্রহণযোগ্যতা বর্তমান যুগেই দেখা যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে জ্বালানি খরচ কমিয়ে ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়, সে দিকগুলো উন্নয়ন করা হয়েছে । আজকাল ইঞ্জিন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন হয় । আগে ইঞ্জিনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ৪/৫ স্পীড ট্রান্সমিশন ব্যাবহার করা হতো বর্তমানে ৮ টিরও বেশী স্পীড ট্রান্সমিশন ব্যাবহার করা হয়। এগুলো গেল সাধারণ গাড়ি, হাইব্রিড গাড়িতে , ইঞ্জিনে ব্যাটারি প্যাক থেকে শক্তি সঞ্চয় করা হয়। হাইব্রিড গাড়িতে ব্যাকআপ হিসেবে সবসময় একটি মোটর ইঞ্জিন রাখা হয়। যার মাধ্যমে শক্তির অনেক সঞ্চয় হয়, মোটর ইঞ্জিন আকারে ছোট, বেশী শক্তি সম্পন্ন হয়। এসব পার্টনার আধুনিক গাড়িগুলোকে অনেক বেশী সফল করে তোলে।
আধুনিক ইঞ্জিন বেশী নির্ভরযোগ্য
বর্তমানে ইঞ্জিনের দক্ষতা, কার্যকারিতা, উপাদান, নির্ভুল ইঞ্জেক্টর, শীতল অবস্থায় শক্তি উৎপাদন, নকশা, জ্বালানি পোড়াতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে আধুনিক ইঞ্জিন আগের থেকে অনেক বেশী নির্ভরযোগ্য।
সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের কাজ নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো। প্রযুক্তির স্বর্ণ শিখরে বাস করে প্রযুক্তিকে সঠিক কাজে লাগানোই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। আধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে একটি উষ্ণ প্রসঙ্গ। হোক সেটা গাড়িতে বা অন্য কোথাও। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সভ্য মানুষকে প্রতিনিয়ত। গাড়ির আরেক আধুনিক প্রযুক্তির নাম ভিটিএস। গাড়িতে ব্যাবহার করুন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ’প্রহরী’ ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সার্ভিস। ২০ টির বেশী ফিচার নিয়ে প্রহরী আপনার গাড়িকে দেবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। গাড়ি সম্পর্কে মজার আর খুঁটিনাটি তথ্য পেতে চোখ রাখুন প্রহরীর ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক পেইজে ।